আমি যে সরকারী কোয়ার্টারে বড় হয়েছি, সেখানে ডাঃ আব্দুস সালাম নামে একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ থাকতেন। তিনি টিচার্স কোয়াটারের প্রায় সকল শিশুর পারিবারিক ডাক্তার ছিলেন। আমি যখন অসুস্থ হতাম তিনি আমাদের বাড়িতে এসে চিকিৎসা করতেন। তার সদয় আচরণ আমাকে ছোট থেকেই মুগ্ধ করেছিল এবং তাকে দেখে বা তার কথা শুনে আমার অর্ধেক রোগ নিরাময় হয়ে যেতো। তিনি একজন চমৎকার ডাক্তার ছিলেন এবং আমাদের কোয়ার্টারে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে, আমি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম, যখন একটি পরিবার সমস্যায় পড়ে তখন কীভাবে একজন ডাক্তার পরিবারের সুখের উৎস হতে উঠতে পারেন।
যখন আমি আমার এমবিবিএস শেষ করে একটি নামী হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসাবে যোগ দেই, আমি দেখেছি যে প্রায়শই সবচেয়ে সফল অধ্যাপকরা রোগীদের স্বল্প সময় দিতেন। তাদের চিকিৎসায় রোগীদের অসুস্থতা নিরাময় হলেও তারা মানসিক শান্তি পেতেন না। তারা আমাদের কাছে প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসে বলত, “আমাকে ডাক্তার কী ওষুধ দিয়েছিল এবং কেন দিয়েছিল? আপনি কি আমাদের রিপোর্ট গুলো ব্যাখ্যা করতে পারেন?” তারপর থেকে আমি উপলব্ধি করেছি, রোগীদের সাথে আরও বেশি সময় কাটানো এবং তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা তাদের বিভ্রান্তি এবং উদ্বেগের অনেক কিছু দূর করতে সহায়তা করতে পারে। তারা আরও আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক শান্তি নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার ছেড়ে যেতে পারেন।
আমি প্রাভা হেলথে প্রথমে লোকাম হিসাবে যোগ দিই এবং প্রত্যক্ষ করি যে কীভাবে প্রাভা প্রতিটি রোগীকে অগ্রাধিকার দেয়। বাংলাদেশে যেখানে ডাক্তাররা প্রতি ভিজিটে প্রত্যেক রোগীর সাথে গড়ে মাত্র ৪৮ সেকেন্ড সময় কাটান সেখানে প্রাভাতে, ডাক্তাররা তাদের রোগীদের সাথে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় ব্যয় করেন। তাদের সমস্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং যে কোন প্রশ্নের উত্তর দেন। এর ফলে, এখানকার ডাক্তাররা জ্ঞান এবং চিকিৎসার সকল ফাঁকগুলি পূরণ করছেন। প্রাভা’র ডাক্তাররা সর্বদা রোগীদের সাথে তাদের চিকিৎসা, রোগ এবং প্রেসক্রিপশন সম্পর্কে বিস্তারত আলোচনা করেন। তারা রোগীকে রোগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করেন এবং মানসিকভাবেও সমর্থন দেন।
ফ্যামিলি মেডিসিনের চিকিৎসক হওয়ার কারণে আমার শৈশবের ডাঃ আব্দুস সালামের কথা মনে পড়ে। যখন রোগীরা তাদের রোগ নির্ণয়ে সন্তুষ্ট হন, তারা কৃতজ্ঞতা ও আশীর্বাদ প্রকাশ করেন। প্রভাতে আসার আগে ফ্যামিলি মেডিসিন নিয়ে কাজ করা আমার স্বপ্নের মতো ছিলো। কারণ বাংলাদেশের যে কয়েকটি জায়গায় ফ্যামিলি মেডিসিন পরিষেবা দেওয়া হয় তারমধ্যে প্রাভা একটি। আমি প্রাভা হেলথের কাছে কৃতজ্ঞ- আমাকে রোগীদের সংস্পর্শে আসতে এবং তাদের পরিবারের অংশ হতে দেওয়ার জন্য।
প্রাভার কাজের পরিবেশ বন্ধুত্বপূর্ণ, নিরাপদ, আরামদায়ক। এখানকার ইতিবাচক মানসিকতায় পূর্ণ কর্মীদের সাথে কাজ করা খুব উৎসাহব্যাঞ্জক। প্রাভা হেলথের প্রত্যেকে সহানুভূতি এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন। প্রাভা হেলথ জনসাধারণের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য নাম হয়ে উঠেছে। শুধু ডাক্তাররাই নয়, পুরো প্রাভা নেটওয়ার্কটি রোগীদের যখনই তাদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা পাওয়া দরকার তখনই তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। প্রাভা’র স্বাস্থ্য কর্মীদের এমন ডেডিকেশন একদিন প্রভা হেলথকে বাংলাদেশের সেরা করে তুলবে।
আমি ১৩ মার্চ ২০২০ সালে প্রাভাতে যোগ দিয়েছি। আমি আমার প্রিয় সহকর্মীদের কাছে ঋনী এবং সবসময় ঋণী থাকব। প্রভার চিফ মেডিকেল অফিসার ডাঃ সিমিন এম আখতার এবং মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক ডাঃ ফয়সাল রহমান আমাকে এই অসাধারণ দলের অংশ হিসাবে নির্বাচিত করেছেন। প্রভা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ার এবং সিইও মিস. সিলভানা কাদের সিনহা একজন চমৎকার, দূরদর্শী এবং ভালবাসায় ভরা হৃদয়সম্পন্ন ব্যক্তি। যিনি আমাদের দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করেন, তাঁর প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও সাধুবাদ জানাচ্ছি।
প্রাভা পরিবারের সদস্য হতে পেরে আমি খুব সম্মানিত এবং গর্বিত বোধ করি।